রাম সাগরে এক সফরে
‘‘দেখবো বাংলাদেশ গড়বো বাংলাদেশ” এই স্লোগান নিয়ে গত ১২ ফ্রেব্রুয়ারী থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পাঁয়ে হেটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমন করেন জাহাঙ্গীর আলম শোভন । পায়ে হেঁটে দেশ দেখা প্রকল্পের স্পন্সর হিসেবে আমরা সর্বক্ষণ তার সঙ্গেই ছিলাম । অনিন্দ্য বাংলাদেশের বাঁকে বাঁকে যে ঐতিহাসিক কিংবা দর্শনীয় স্থানগুলো রয়েছে যা অনেকেরই অজানা, সেই স্থানগুলিকে সবার দৃষ্টিসীমার মধ্যে নিয়ে আসার জন্যই ইয়ানুর বিডি ২৩ ডড কম এই আপ্রাণ প্রচেষ্টা । পাঁয়ে হেটে দেশ ভ্রমণ শেষে জাহাঙ্গীর আলম শোভন জানিয়েছেন রাম সাগরের বিস্তারিত তথ্য ।
দিনাজপুরে প্রাণনাথ নামে এক রাজা ছিলেন। সুশাসক ও প্রজাপ্রিয় রাজা বলে তাঁর দেশজোড়া খ্যাতি ছিল, আর ছিল অফুরন্ত ধনসম্পদ। সুখ হয়তো বেশীদিন থাকে না। ১৭৫৭ সালে শুকনো মৌসুমে শুরু হয় একটানা অনাবৃষ্টি খরায় খাল-বিল, দিঘি-নালা শুকিয়ে কাঠ। প্রজাসাধারনের জলকষ্ট দেখে রাজা সিদ্ধান্ত নিলেন গভীর দিঘী খননের। যাতে করে সহজে পানি শুকিয়ে না যায় । ১৫ হাজার শ্রমিক ১৫ দিনের মধ্যে খনন করল এক বিশাল দিঘী। কিন্তু এমন মরার খরা গভীর দিঘীতে পানির টিকিটি পর্যন্ত দেখা যায়না । কথিত পুরান মতে রাজা স্বপ্নে আদৃষ্ঠ হয়ে দিঘির মধ্যস্থলে একটি ছোট মন্দির করলেন। যুবরাজ রাম নেমে গেলেন দিঘীর নিচে সে মন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গে দিঘির তলদেশ হতে অজস্র ধারায় পানি উঠতে লাগল। তারপর পানিতে ডুবে সলিল সমাধি হলো যুবরাজ এর। যুবরাজ রামের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে দিঘির নাম রাখা হলো রামসাগর।
রামসাগরের স্থির, স্বচ্ছ সাগরের মতো নীল জলরাশি দেখলে নৌকায় চড়ে ভেসে যেতে মন চাইবে এপার থেকে ওপার। রামসাগর জাতীয় উদ্যানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জাতীয় উদ্যান। এর পাকা রাস্তার পাশে গাছগুলোতে পাখির কলকাকলিতে রামসাগরের পরিবেশে তৈরী হয় অন্যরকম এক ব্যঞ্জনা । শীতকালে রামসাগর দিঘির জলে হাজার হাজার জলজ অতিথি পাখির সমাবেশে তৈরি হয় মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। অতিথি পাখিরা ভিড় জমায় এখানে। রয়েছে কৃত্রিম বন। বনের সারি সারি গাছের মধ্য দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর সময় আপনার মন প্রকৃতির এক কোমল পরশে হয়ে যাবে আনমনা। সবুজে শ্যামলে ঘেরা রামসাগর একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিনই পিকনিক পার্টি ও পর্যটকেরা ভীড় করে এখানে। দিনাজপুর ভ্রমনে আসলে খেতে পারেন এখানকার বিশেষ খাবারগুলো লিচু, চিড়া,পাপড় ।
রামসাগর জাতীয় উদ্যানে আছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। সেখানে আছে হরিণ, বানর, অজগর। শিশুদের জন্য রয়েছেএকটি শিশুপার্ক। আছে পিকনিক কর্নার। ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে প্রচুর জায়গা। এখানে উদ্যানটি বেশ সুন্দর। রয়েছে পিকনিক পার্টির রান্না ও বাস পার্কিং এর জায়গা। পরিত্যক্ত একটি পুরনো মন্দির আছে। আছে অন্যপাশে একটি নুতুন মন্দিরও। তবে মন্দিরটি কে কখন বানিয়েছেন আর কখন পরিত্যক্ত হয়েছে কোনো তথ্য দেয়া নেই। দেয়ালের নকশাটাকা আর নির্মাণশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে এর ভেতরে গেলে গা ছম ছম করবে। মনে হবে ইতিহাসের ভেতর বসে ইতিহাস দেখছেন।
বর্তমানে বখাটেদের আড্ডা আর মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই সুন্দর স্থানটি। কতৃপক্ষ সঠিকভাবে নজর দিলে এই সমস্যার সমধান হতে পারে।
যাওয়ার ব্যাপার
থেকে দিনাজপুরগামী বাস ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৯০০ টাকা। নন-এসি বাস ভাড়া৫০০-৫৫০ টাকা।ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়েসকাল ৯টা ৫০ মিনিটে।ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার।দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়েসকাল ৮টা ১০ মিনিটে আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে।দিনাজপুর থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।
থাকার ব্যাপার
রামসাগরের একতলাবিশিষ্ট একটি বাংলো এখানে থাকতে হলে স্থানীয় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তবে ্আজকাল অনুমতি সাধারণত দেয়া হয়না। এটা সরকারী কর্তারা ছাড়া কেউ থাকতে পারেনা বললেই চলে।দোত লা ভবনটিতে তিনটি সাধারণ এবং একটিশীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ আছে। প্রতিটি সাধারণ কক্ষের ভাড়া প্রতি রাত ৫০০ টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা।নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থাকরতে হয়।
এছাড়া দিনাজপুর শহের বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। রয়েছে কিছু এনজিওর রেস্টহাইস । কারিতাস ট্রেনিং সেন্টার-কাম-গেষ্ট হাউজ, প:শিবরামপুর সদর, দিনাজপুর। ফোনঃ ০৫৩১-৬৫৬৭৩, E-Mail
, তৈয়বা মজুমদার রেড ক্রিসেন্ট রক্তদান কেন্দ্র রেষ্ট হাউজ, উপশহর, দিনাজপুর। ফোনঃ ০৫৩১-৬১৩০০।ব্র্যাক গেষ্ট হাউজ, বাঁশের হাট, দিনাজপুর, মোবাইলঃ ০১৭১১৮০৭৯৭৪। পল্লী শ্রী, বালুবাড়ী, দিনাজপুর।
0 মন্তব্যসমূহ